ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আত্মজীবনীমূলক বর্ণনাধর্মী অসমাপ্ত রচনার নাম ‘আত্মচরিত’; সংকলিত অংশে তাঁর শৈশব জীবনের কথা বিধৃত হয়েছে। এ রচনায় ঈশ্বরচন্দ্র তাঁর পিতা, পিতামহ ও জননীর কথা বর্ণনা করেছেন । বিষয় অনুসারে গদ্যের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে তাঁর সহজাত শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটেছে বর্তমান রচনায় । কৌতুকবোধ, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও মমতা এবং পাঠকের বোধগম্য করার অভিপ্রায়ে যথার্থ বিরামচিহ্ন ব্যবহার বর্তমান রচনার বিশিষ্ট প্রান্ত । ঈশ্বরচন্দ্র শৈশবকালে ছিলেন ডানপিটে। পাঁচ বছর বয়সে গ্রামের পাঠশালায় তাঁকে ভর্তি করা হয় এবং আট বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করেন। তাঁর পিতামহ রামজয় তর্কভূষণের মৃত্যুর পর, পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থোপার্জনের নিমিত্তে কলকাতায় পাড়ি জমান, তখন বালক ঈশ্বরচন্দ্রও পিতার হাত ধরে শহরে আসেন । কলকাতায় যাবার প্রাক্কালে, রাস্তার পাশে ‘বাটনাবাটা শিলের মতো' প্রস্তর বা মাইলস্টোন দেখে বালক ঈশ্বরচন্দ্র খুবই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন এবং তাঁর পিতৃদেবের সহায়তায় পাথরের গায়ে খোদিত ইংরেজি অঙ্কগুলো অতি দ্রুত শিখে নেন। বালকের অভাবিত মেধাশক্তির পরিচয় পেয়ে তাঁর পিতা ও অন্য সহগামীবৃন্দ বিস্ময়াভিভূত হন; তখন কেউ কেউ ঠাকুরদাসকে পরামর্শ দেন, ঈশ্বরচন্দ্রকে যেন ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করা হয়, কারণ ইংরেজি ভাষা ভালো জানা থাকলে ‘সাহেবদিগের হৌসে ও সাহেবদের বড় বড় দোকানে কাজ পাওয়া সহজ হবে। কিন্তু ঠাকুরদাস এসব পরামর্শ কানে নেননি।
আরও দেখুন...